সংবিধানের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে বন্ধ স্বরস্বতী পুজো!
সংবিধানের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে বন্ধ স্বরস্বতী পুজো!
বিশ্বজিৎ ঘোষ, কলকাতা: সংবিধানের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার
আবেদন৷ আর, তার
জেরেই বিভিন্ন মহলে
শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ এবং,
একই সঙ্গে ফের
উঠছে প্রশ্ন: সংবিধানের বিষয়ে
এ দেশের কত
শতাংশ নাগরিকের ধারণা
স্পষ্ট?
সংবিধানের মর্যাদা অক্ষুণ্ম রাখার
ওই আবেদন জানিয়েছে ভারতীয় বিজ্ঞান ও
যুক্তিবাদী সমিতি৷ ওই
আবেদনে এমন জানানো
হয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী আমাদের
দেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র৷ যে
কারণে, সরকারি বা
সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলিতে কোনও
ধর্মীয় অনুষ্ঠান অসাংবিধানিক বিষয়৷
ওই কারণে, সরকারি
বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কোনও
বিদ্যালয়ে স্বরস্বতী পুজো
করাও অসংবিধানিক বিষয়৷
শুধুমাত্র তাই নয়৷
ওই আবেদনে এমনও
জানানো হয়েছে যে,
পশ্চিমবঙ্গের মধ্যশিক্ষা পর্ষদ
বা উচ্চশিক্ষা সংসদের
নির্দেশিকা অনুযায়ী বিদ্যালয়ে যে
সব অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা
বলা রয়েছে, সেখানে
স্বরস্বতী পুজোর উল্লেখ
নেই৷
যে কারণে, প্রশাসনের কাছে
ভারতীয় বিজ্ঞান ও
যুক্তিবাদী সমিতির ওই
আবেদনে এমন অনুরোধ
রয়েছে, অনুগ্রহ করে
সরকারি বা সরকারি
সাহায্যপ্রাপ্ত
বিদ্যালয়গুলিতে
স্বরস্বতী পুজো বন্ধের
নির্দেশ দিয়ে দেশের
সংবিধানের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে
সাহায্য করা হোক৷
এবং, সংবিধানের মৌলিক
কর্তব্য (৫১-এ
ধারা) অনুযায়ী বিজ্ঞান মনস্কতা প্রসারে এগিয়ে
আসা হোক৷ ওই
সংগঠনের তরফে এই
ধরনের আবেদন জানানো
হয়েছে পুরুলিয়ার প্রশাসনের কাছে৷
যদিও, এই ধরনের
আবেদন যেমন শুধুমাত্র পুরুলিয়ায় নয়৷
তেমনই, ওই সংগঠনের তরফে
এই ধরনের আবেদন
আবার এই প্রথম-ও নয়৷
ভারতীয় বিজ্ঞান ও
যুক্তিবাদী সমিতির পুরুলিয়ার সম্পাদক মধুসূদন মাহাতর
কথায়, ‘‘২০০১-এ
আমরা পুরুলিয়ার চারটি
হাই এবং দু’টি প্রাইমারি স্কুল
কর্তৃপক্ষের কাছে সংবিধানের মর্যাদা অক্ষুণ্ম রাখার
আবেদন রেখেছিলাম৷ ওই
আবেদনে সাড়া দিয়ে
একটি প্রাইমারি স্কুলে
স্বরস্বতী পুজো বন্ধ
করে দিয়েছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ৷’’ তবে,
এ বার আর
স্কুল কর্তৃপক্ষদের কাছে
আবেদন জানানো হয়নি৷
কেন? তিনি বলেন,
‘‘পুরুলিয়া জেলার ২০টি
ব্লকের আটটি গ্রাম
পঞ্চায়েতের প্রতিটি সরকারি
বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের জন্য
আমরা ডিএম, এসপি,
ডিআই সেকেন্ডারি এবং
ডিআই প্রাইমারির কাছে
আবেদন করেছি৷ কারণ,
প্রশাসনের নির্দেশ ওই
সব স্কুলের কর্তৃপক্ষ পালন
করবে৷’’
কিন্তু, কী বলছেন
পুরুলিয়ার ডিআই অর্থাৎ,
ডিস্ট্রিক্ট ইন্সপেক্টর অফ
স্কুলস (সেকেন্ডারি) রাধারানি মুখোপাধ্যায়? শুক্রবার সন্ধ্যার পরে
ফোনে তাঁর কাছে
ভারতীয় বিজ্ঞান ও
যুক্তিবাদী সমিতির ওই
আবেদনের বিষয়ে জানতে
চাওয়া হলে রাধারানি মুখোপাধ্যায় বলেন,
‘‘গণতান্ত্রিক দেশে কোনও
স্কুলে স্বরস্বতী পুজো
বন্ধের নির্দেশ দিতে
পারি না৷ আমি
একজন সরকারি আধিকারিক৷ সংবিধানের বাইরে
যাব কী করে?’’
অন্যদিকে, ওই আবেদনের বিষয়ে
এ দিনই সন্ধ্যার পরে
ফোনে পুরুলিয়ার ডিআই
(প্রাইমারি) সংঘমিত্র মাকুড়ের কাছে
জানতে চাওয়া হলে,
তিনি বলেন, ‘‘আমি
এখনও ওই আবেদন
দেখিনি৷ না দেখে
কিছু বলতে পারব
না৷’’ দুই ফেব্রুয়ারি ওই
আবেদন করা হয়েছে,
এখনও দেখেননি ডিআই
(প্রাইমারি)? এই ধরনের
প্রশ্নে সংঘমিত্র মাকুড়ের কার্যত
বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার উত্তর,
‘‘আমার কাছে এখনও
আসেনি৷’’
শুক্রবার সন্ধ্যার পরে
ফোনে যোগাযোগ করা
হয় পুরুলিয়ার ডিএম
তন্ময় মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে৷
তবে ফোন ধরেন,
সেখানকার এডিএমজি অরুণ
প্রসাদ৷ কারণ, ডিএম
ছুটিতে রয়েছেন বলে
জানানো হয়েছে৷ ভারতীয় বিজ্ঞান ও
যুক্তিবাদী সমিতির ওই
আবেদনের বিষয়ে অরুণ
প্রসাদের কাছে জানতে
চাওয়া হলে, তিনি
বলেন, ‘‘এই বিষয়ে
সিদ্ধান্ত নিতে পারি
না৷ বিষয়টি রাজ্য
সরকারকে জানানো হবে৷’’
রাজ্য সরকারকে জানানো
হয়েছে? তিনি বলেন,
‘‘না, জানানো হবে৷’’
তবে, মধুসূদন মাহাত
বলেন, ‘‘সংবিধানের মর্যাদা অক্ষুণ্ম রাখার
জন্য প্রশাসনের তরফে
নির্দেশ দেওয়া হবে
বলে আমরা আশা
করছি৷ প্রশাসন যদি
নির্দেশ না দেয়,
তা হলে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে
আমরা সিদ্ধান্ত নেব৷’’
এই বিষয়ে ভারতীয় বিজ্ঞান ও
যুক্তিবাদী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির
সভাপতি প্রবীর ঘোষ
বলেন, ‘‘আমাদের দেশের
সংবিধান অনুযায়ী, সরকারি
বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কোনও
স্কুলে-ও ধর্মীয় আচরণ
করা যাবে না৷
স্কুলগুলিতে সাধারণত স্বরস্বতী পুজো
হয়৷ তাই, সংবিধানের মর্যাদা অক্ষুণ্ম রাখতে
আমরা ওই আবেদন
করেছি৷ এই ধরনের
আবেদনে সাড়া দিয়ে
কলকাতার অনেক স্কুলে
স্বরস্বতী পুজো বন্ধ
করে দেওয়া হয়েছে৷’’ তা
হলে, সংবিধানের মর্যাদা অক্ষুণ্ম রাখতে
প্রশাসন অর্থাৎ, পুরুলিয়ার ডিএম,
ডিআই (সেকেন্ডারি) এবং
ডিআই (প্রাইমারি)-এর
তরফে কেন ওই
ধরনের বক্তব্য? রাধারানি মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য সম্পর্কে প্রবীর
ঘোষ বলেন, ‘‘সংবিধানের বিষয়ে
পুরুলিয়ার ডিআই সেকেন্ডারি স্পষ্ট
ধারণা নেই বলেই
মনে হচ্ছে৷ তাঁর
যদি স্পষ্ট ধারণা
থাকে, তা হলে,
আমার এই মন্তব্য তিনি
খন্ডন করুন৷’’ যে
কারণে, ফের ফোনে
যোগাযোগ করা হয়
রাধারানি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে৷
তবে, তিনি ফোন
না ধরায়, এই
প্রসঙ্গে তাঁর কোনও
বক্তব্য মেলেনি৷
Link: http://www.bengali.kolkata24x7.com/constitution-of-india-and-bharatiya-bigyan-o-yuktibadi-samiti.html
Comments
Post a Comment